আমার সোনার বাংলা
শিল্পী : শ্রীকান্ত আচার্য
অ্যালবাম : সোনার বাংলা
গীতিকার : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পর্যায় : স্বদেশ
তাল : দাদরা
সময় : ১৯০৫
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে ।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি ।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি ॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি ॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে ।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি ।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে ।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি ।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি ॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি ॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে ।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি ।
ইতিহাস
:
রচনা ও সুরারোপ :
আমার সোনার বাংলা গানটি
রচিত
হয়েছিল ১৯০৫
সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গানটির
পাণ্ডুলিপি পাওয়া
যায়নি,
তাই
এর
সঠিক
রচনাকাল জানা
যায়
না।সত্যেন রায়ের
রচনা
থেকে
জানা
যায়,
১৯০৫
সালের
৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায়
এই
গানটি
প্রথম
গীত
হয়েছিল। এই
বছরই
৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২
ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে গানটি মুদ্রিত হয়।
এই
বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও গানটি
মুদ্রিত হয়েছিল। তবে
৭ অগস্ট উক্ত সভায়
এই
গানটি
গীত
হওয়ার
কোনো
প্রমাণ
পাওয়া
যায়
না।বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের
মতে, আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫
অগস্ট
কলকাতার টাউন
হলে অবস্থা ও ব্যবস্থা প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথম
গীত
হয়েছিল।
আমার সোনার বাংলা গানটি
রচিত
হয়েছিল শিলাইদহের ডাক-পিয়ন গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির
সুরের
অণুষঙ্গে। সরলা দেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ
মাসে
তাঁর শতগান সংকলনে গগন হরকরা
রচিত
গানটির
স্বরলিপি প্রকাশ
করেছিলেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেক
স্বদেশী গানের
সুরই
এই
স্বরলিপি গ্রন্থ
থেকে
গৃহীত
হয়েছিল।যদিও পূর্ববঙ্গের বাউলদের ভিডমিড ও ভাটিয়ালি সুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ইতঃপূর্বেই হয়েছিল বলে
জানা
যায়।
১৮৮৯-১৯০১ সময়কালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারির কাজে ভ্রমণ ও বসবাসের সময়
বাংলার
লোকজ
সুরের
সঙ্গে
তাঁর
আত্মীয়তা ঘটে।
তারই
অভিপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী আন্দোলনের সমসাময়িক গানগুলি, বিশেষত আমার সোনার বাংলা।
যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা
শহরের
কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা
শেষে
ঘোষিত
ইশতেহারে এই
গানকে
জাতীয়
সঙ্গীত
হিসাবে
ঘোষণা
করা
হয়।
১৯৭১
সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই
গান
প্রথম
জাতীয়
সঙ্গীত
হিসাবে
গাওয়া
হয়।১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটির প্রথম দশ লাইন সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।
বিশ্ব রেকর্ড :
২০১৪ সালের ২৬ মার্চ, জাতীয় প্যারেড ময়দান, ঢাকা, বাংলাদেশে একসঙ্গে ২৫৪,৫৩৭ জন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ায় মাধ্যমে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড করে।
চলচ্চিত্রায়ন
:
চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার
বিখ্যাত জীবন থেকে নেওয়া কাহিনীচিত্রে এই গানের চলচ্চিত্রায়ন করেন।
No comments